সুন্দরবনের দুবলার চরে ঐতিহ্যবাহী রাস মেলার আর মাত্র ৪ দিন বাকি। আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে ৩দিন ব্যাপী এ মেলার শুরু হবে। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঐ পূজা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিগত বছরের মতো এবারও বনবিভাগসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়েছেন নানা পদক্ষেপ। অসাধু দর্শনার্থীরা যাতে বনে প্রবেশ করে হরিণ শিকার করতে না পারে সে ব্যাপারেও নেওয়া হবে কঠোর পদক্ষেপ।
রাস পূজা ও মেলা উদ্যাপন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পাপ মোচনের লক্ষ্যে প্রায় শত বছর ধরে সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোর কোলে রাস পূজা হয়ে আসছে। প্রতি বছর কার্তিক বা অগ্রহায়ন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জোয়ারের লোনা পানিতে স্নানে পাপ মোচন হয়ে মনের বাসনা পূর্ণ হবে এমন আশা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা এ মেলায় যোগ দেয়। এছাড়া কেউ আসে সস্তান কামনায়, কেউ আসেন রোগ মুক্তির কামনায়। আগামী ১৬ নভেম্বর পূর্ণিমার জোয়ারের লোনা পানিতে স্নানের মধ্য দিয়ে এ পূজার সমাপ্তি হবে। পূজা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন ও দর্শনার্থীদের চলাচলে নিরাপত্তার জন্য বনবিভাগ পূর্বের ৫টি রুট বহাল রেখেছেন। রুটগুলো হলো ঢাংমারী ও চাঁদপাই স্টেশন তিনকোনা আইল্যান্ড হয়ে দুবলারচর আলোরকোল, বগী-বলেশ্বর সুপতি স্টেশন নকচিখালী শেলারচর হয়ে দুবলারচর আলোরকোল, বুড়ি গোয়ালিনী ও কোবাদক বাটুলা নদী বল নদী-পাটকোস্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী হয়ে দুবলার চর আলোরকোল, কয়রা কাশিয়াবাদ খাসিটানা বজবজা হয়ে আড়ুয়া শিবসা-শিবসা নদী মরজাত নদী হয়ে দুবলারচর আলোরকোল, নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা মরজাত হয়ে দুবলারচর আলোরকোল।
এবিষয়ে রাস পূজা ও মেলা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক প্রদীপ বসু সন্তু বলেন, ১৫ নভেম্বর পূজা অর্চনা আর ১৬ নভেম্বর শনিবার ভোরে পূণ্য স্নান অনুষ্ঠিত হবে।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের খুলনা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) এজেড এম হাসানুর রহমান বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও তীর্থ যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের নির্ধারিত রুটগুলোতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর র্যাব, কোষ্টগার্ড, পুলিশ, বনকর্মীরা ও নৌবাহিনীর বেশ কয়েকটি টিমের টহল জোরদার থাকবে।
এ ছাড়া এবার রাস মেলা হবে না। শুধু রাস পূজা ও পূণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে। লাউড স্পিকার, মাইক সাউন্ড সিষ্টেম ব্যতিত সর্বোচ্চ রাত ১২টা পর্যন্ত পূণ্যার্থীগণ কীর্তন ও ধর্মীয় গান পরিবেশন করতে পারবেন। অনুষ্ঠানে শুধু মাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই যেতে পারবে। অন্য কোন ধর্মের লোক যেতে পারবে না। পূণ্যার্থীদের অবশ্যই নিজ নিজ জাতীয় পরিচয় পত্রের মূল ও ফটোকপি সাথে রাখতে হবে এবং বনে প্রবেশের সময়ে বন বিভাগের অফিসে ফটোকপি জমা দিতে হবে। পূণ্যস্নান উপলক্ষে পূণ্যার্থীদের আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ৩দিনের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে ১৪ নভেম্বর ভোর ৬টার পর থেকে বর্নিত রুটসমূহ হতে পূণ্যার্থীদের ট্রলার ছেড়ে যাবে এবং দুবলায় অবস্থিত বন বিভাগের কন্ট্রোল রুমে অবশ্যই রিপোর্ট করতে হবে। আর পূণ্যার্থীদের প্রবেশের সময়ে প্রতিটি এন্ট্রি পয়েন্ট যথা ঢাংমারি, চাঁদপাইসহ বিভিন্ন স্টেশনে লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকার প্রবেশের মূল্য, অবস্থান ফি, ক্যামেরা এবং লোকের সংখ্যানুযায়ী বিধি মোতাবেক রাজস্ব দাখিল করে পারমিট ও প্রবেশ কুপন নিতে হবে।
তবে কোন জলযানে ৫০ জনের বেশি যাত্রী নিতে পারবে না। পারমিট ছাড়া কেউ বনে প্রবেশ করতে পারবে না। পূণ্যার্থীদের স্নান শেষে একই রুট দিয়ে ফিরতে হবে এবং পূর্বের স্টেশনে পাশ সমার্পন করে বের হয়ে যাওয়ার সনদপত্র নিতে হবে। নীতিমালা অনুসরন ড্রোন বহন ও ব্যবহার করা যাবে। তা ছাড়া যাতে অসাধু দর্শনার্থীরা বনে প্রবেশ করে কেউ যাতে হরিণ শিকার করতে না পারে সে ব্যাপারেও নেয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা।