সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে অফিসে ঢুকে প্রধান শিক্ষকের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই ছাত্রদল নেতা।
রবিবার (১০ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন বুড়িগোয়ালীনি ফরেস্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুস সালামের নেতৃত্বে সংঘটিত হামলায় বিদ্যালয়ের চাকুরীচ্যুত কর্মচারী গোলাম কিবরিয়াসহ পাঁচ-ছয় জন অংশ নেয় বলে জানা গেছে।
এসময় চোখ, মুখ ও মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়।
খবর পেয়ে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবীর মোল্যা ও শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
হামলার শিকার শিক্ষক আয়ুব আলী জানান, তিনি বিদ্যালয়ের নিজ কক্ষে বসে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। একপর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে ছাত্রদল নেতা আব্দুস সালামের নেতৃত্বে পাঁচ-ছয় জন তরুণ অফিস কক্ষে ঢুকেই তাকে মারধর শুরু করে। এসময় তার ডাক-চিৎকারে পাঠদানরত অপরাপর শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষ ছেড়ে এগিয়ে এলে হামলাকারীরা আবারও আসার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
আয়ুব আলী আরোও জানান, প্রায় তিন বছর পূর্বে বিদ্যালয়ের এলএমএসএস (নৈশ প্রহরী) পদে কর্মরত গোলাম কিবরিয়ার চাকুরী চলে যায়। এক ছাত্রীকে অপহরণ ও পর্ণ ভিডিও ধারণসহ পূর্বের একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরিদর্শকের নির্দেশে পরিচালনা পর্ষদ তাকে চাকুরীচ্যুত করে। ওই ঘটনার জেরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রদল নেতাকে নিয়ে তার উপর হামলা চালানো হয়ে থাকতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদল নেতা আব্দুস সালাম জানান, কিবরিয়ার চাকুরীর বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধান শিক্ষকের অফিসে গিয়েছিলাম। বাদানুবাদের একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে কিবরিয়া সামান্য মারধর করলেও অন্যরা প্রধান শিক্ষকের গায়ে হাত দেয়নি। প্রধান শিক্ষকের কাছে যাওয়ার আগে তারা বিএনপি সভাপতিকে বিষয়টি অবহিত করেছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম আবু বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি অবহিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব পাঠানো হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান মিঠু জানান, প্রধান শিক্ষকের উপর হামলার ঘটনায় তারা আইনের পথে হাঁটবেন। আহত আয়ুব আলীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, হামলার সাথে জড়িতরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আসায় তিনি শিক্ষক সমিতির নেতাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তবে তারা সরাসরি প্রধান শিক্ষকের উপর হামলা করে ভুল করেছে।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ হুমায়ন কবীল মোল্যা জানান, তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের বক্তব্য শুনেছেন। হামলার শিকার প্রধান শিক্ষককে জড়িতদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগ সাপেক্ষ্যে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।