গত আইপিএলে মিচেল স্টার্কের জন্য ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপি খরচ করেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। এ মৌসুমেও ভেংকটেশ আইয়ারের জন্য ২৩ কোটি ৭৫ লাখ খরচ করেছে তারা। কিন্তু সংবাদ শিরোনামে এই দর জায়গা পায়নি।
কারণ, এর আগেই শ্রেয়াস আইয়ারের জন্য ২৬ কোটি ৭৫ লাখ রুপি খরচ করেছে পাঞ্জাব কিংস। একটু পর সে রেকর্ড ভেঙেছে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস। ঋষভ পন্তকে কিনতে খরচ করেছে ২৭ কোটি রুপি। অঙ্কটা চোখ কপালে তোলার মতো। কিন্তু মহেন্দ্র সিং ধোনিকে কিনতে চেন্নাই সুপার কিংস যা করেছিল, তার ধারেকাছে যেতে পারেনি কোনো দল।
২০০৮ সালে আইপিএল শুরু হয়েছে। যত সময় গড়িয়েছে প্রতিটি দল স্কোয়াড গড়ার জন্য বাজেটে বেশি পেয়েছে। গত মৌসুমেই প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির বাজেট ছিল ১০০ কোটি রুপি। সেটা এবার বেড়ে হয়েছে ১২০ কোটি রুপি। অর্থাৎ, পন্তকে পেতে লক্ষ্ণৌ তাদের বাজেটের ২২.৩%ই খরচ করেছে।
অঙ্কটা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। কিন্তু গত মৌসুমেই স্টার্কের পেছনে কলকাতার ব্যয় এর বেশি ছিল (২৪.৮%)।
২০০৮ আইপিএলে বাজেট রুপিতে নয়, ডলারের হিসেব হয়েছিল। সেবার বেতন খাতে প্রতিটি দল ৫০ লাখ ডলার করতে পারত। সেবার মুম্বাই, কলকাতা, রাজস্থান ও পাঞ্জাব নিজেদের আইকন খেলোয়াড় আগেই পেয়েছিল। দিল্লি ও হায়দরাবাদও এর জন্য আবেদন করেছিল। সেবার নিয়ম ছিল একটি দল নিলামে কোনো খেলোয়াড়ের পেছনে সর্বোচ্চ যে দর খরচ করবে, আইকন খেলোয়াড় তার চেয়ে ১৫% বেশি পাবেন।
দলের ভালোর জন্য হায়দরাবাদের আইকন ভিভিএস লক্ষণ আইকনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। বাকি পাঁচ দল আইকন নিয়ে নেমেছিল সেবারের আইপিএলে।
নিজেদের অঞ্চলের কোনো বড় তারকা না পেয়ে ধোনিকে ১৫ লাখ ডলারে কিনেছিল। ওদিকে লক্ষণের ডেকান চার্জার্স অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে কিনতে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার খরচ করেছিল। যদি আইকন হতে রাজি হতেন তবে সেবারের আইপিএল ১৫ লাখ ৫২ হাজার ডলার পেতেন লক্ষণ।
সেটা না হওয়ায় প্রথম আইপিএলের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় ছিলেন ধোনি। আর আগেই বলা হয়েছে ২০০৮ আইপিএলে দলগুলো বেতনের জন্য ৫০ লাখ ডলার বাজেট পেয়েছিল। অর্থাৎ ধোনির জন্য সেবার নিজেদের বাজেটের ৩০ ভাগ খরচ করেছিল চেন্নাই।
এরপরে আইপিএল নিলামে অর্থমূল্যে অনেকেই ধোনিকে ছাড়িয়ে গেছেন। ২০১১ সালেই আইপিএলে জেতার আশায় গৌতম গম্ভীরের জন্য ২৪ লাখ ডলার খরচ করেছিল কলকাতা। কিন্তু সেবার বাজেট ছিল ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ, গম্ভীরের জন্য ২৬.৭% খরচ করেছিল কলকাতা।
২০১২ আইপিএলে জাদেজার জন্য চেন্নাই বাজেটের ২২% ব্যয় করেছিল। ২০১৪ ও ২০১৫ আইপিএলে দুবার নিলামের রেকর্ড ভেঙেছিলেন যুবরাজ। ততদিনে আইপিএলের নিলাম রুপিতে বদলে গিয়েছে। প্রথমবার যুবরাজকে ১৪ কোটিতে কিনেছিল বেঙ্গালুরু, যা ৬০ কোটি বাজেটের ২৩.৩%। পরের বছর দিল্লির ৬৩ কোটির বাজেটের ২৬.৭% ব্যয় হয়েছিল যুবরাজের (১৬ কোটি) পেছনে।
২০১৭ সালে বেন স্টোকসের জন্য বিদেশিদের রেকর্ড ভাঙতেও রাজস্থান বাজেটের ২২ ভাগ খরচ করেছিল।
তার মানে টাকার অঙ্কে যতই পেছনে ফেলা হোক, দলের বাজেট বিবেচনায় ধোনির কাছে কেউ নেই।
সে হিসেবে ২০২৫ আইপিএলে যদি ২০০৮ এর ধোনিকে তোলা যেত তার দাম কত হতো? ১২০ কোটি বাজেটের ৩০% অর্থাৎ ৩৬ কোটি। সম্ভবত না।
২০০৮ আইপিএলের পরিস্থিতিটা একটু চিন্তা করুন। মাত্রই ভারতকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ধোনি। বিশ্বের সবচেয়ে আগ্রাসী ব্যাটসম্যানদের একজন, সময়ের সেরা ফিনিশার এবং অধিনায়কত্ব অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা একজন। এবং সেবার নিলামে কলকাতা, মুম্বাই, পাঞ্জাব, দিল্লি ও বেঙ্গালুরুতে আগ থেকেই আইকন খেলোয়াড় থাকায় ধোনিকে নেওয়ার চেষ্টা ঠিকভাবে করতে পারেনি।
২০২৫ আইপিএলে আইকন খেলোয়াড়ের বাধা ছিল না এবং নিলামে ২০০৮ এর মতো ধোনির মতো লোভনীয় এক প্যাকেজকে পেতে দলগুলো হয়তো ৩৬ কোটিতেও থামত না। পন্তের জন্য ২৭ কোটি আর টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ না পাওয়া আইয়ারের জন্য ২৬ কোটি ৭৫ লাখ রুপি খরচ করা কিন্তু সে ইঙ্গিতই দেয়!