দুর্দান্ত বোলিং-ব্যাটিংয়ে চালকের আসনে বাংলাদেশ
বোলারদের তৈরি করে দেওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবার বড় লক্ষ্যেই ছুটছেন টাইগার ব্যাটাররা। সাদমান-মিরাজদের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ইতোমধ্যে ২১১ রানের লিড নিয়ে জ্যামাইকা টেস্টে রীতিমত চালকের আসনে বাংলাদেশ।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) তৃতীয় দিনের খেলা শেষে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৯৩ রান।
১৮ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই অবশ্য দেখা মেলে সেই পুরোনো চিত্র। স্কোরবোর্ডে কোনো রান তোলার আগেই বাংলাদেশ হারায় ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে। তাকে ফেরান জেইডেন সিলস।
প্রথম ওভারে উইকেট খোয়ালেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪৭ রান তুলে বিপদ সামাল দেন সাদমান ইসলাম ও ওয়ান ডাউনে নামা শাহাদাত হোসেন দিপু। আলজারি জোসেফের শিকার হওয়ার আগে দিপু করেন ২৬ বলে ২৮ রান।
মুমিনুল হক ইনজুরি আক্রান্ত হওয়ায় এরপর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। সাদমানের সঙ্গে যোগ দিয়ে দুরন্ত ব্যাট চালিয়ে গড়েন ৭০ রানের এক অনবদ্য জুটি। ক্যারিবীয় পেসারদের ওপর পালটা আক্রমণ চালিয়ে গড়া এই জুটিতেই মূলত বড় লিডের ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
তবে গতিময় পেসার শামার জোসেফের গতির কাছে সাদমান পরাস্ত হলে ভাঙে এই জুটি। প্রথম ইনিংসের হাফ-সেঞ্চুরিয়ানকে এবার ফিরতে হয় ৪৬ রানে। এরপর লিটনের সঙ্গে ১৫ রান যোগ করেই ফেরেন ৩৯ বলে ৪২ করা মিরাজও, সেই একই বোলারের গতির কাছে হার মেনে।
অন্যদিকে আজ কিছুটা সাবলীল শুরু করলেও আচমকা গ্রিভসের ইনকামিং ডেলেভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন লিটনও, ২৫ রান করে। যাতে ১৭৩ রানের মাথায় ৫ম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর তাইজুলকে নিয়ে আরও ২০ রান যোগ করে অবিচ্ছিন্ন আছেন টানা দুই টেস্টে ফিফটি পাওয়া জাকের আলি অনিক। তার সংগ্রহ ২৯ রান, আর ৯ রানে ব্যাট করবেন তাইজুল।
এর আগে, প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয় ১৬৪ রানে। দুর্দান্ত বোলিংয়ে স্বল্প পুঁজি নিয়েও লড়াই জমিয়ে দেয় বোলাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অলআউট করে দেয় ১৪৬ রানে। তাতেই হয়েছে ১৮ রানের লিড।
নাহিদ রানার নেতৃত্বে ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামায় বাংলাদেশ। এই গতি দানব একাই তুলে নেন পাঁচ উইকেট। তার প্রথম ফাইফারে দিশেহারা স্বাগতিকরা ভালো শুরুর পরও তাই শেষ পর্যন্ত মুখ থুবড়ে পড়ে। ৬১ রানে পাঁচ শিকার করেন রানা। শুরু ও শেষে তার তোপের মুখে দাঁড়াতেই পারেনি ক্যারিবীয়রা।
দিনের শুরুতে নাহিদের টপ লেন্থের ডেলিভারিতে জাকির হাসানের হাত ক্যাচ তুলে দেন ক্রেইগ ব্রাফেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়কের বিদায়ে ভাঙে দ্বিতীয় উইকেটে ৬০ রানের জুটি। দলীয় ৮৫ রানে আউট হওয়ার সময় ব্রাফেটের ব্যাট থেকে আসে ৩৯ রান। এরপর দাঁড়াতে পারেননি কাভেম হজও। মাত্র তিন রান করে নাহিদের বলে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন হজ। ৯৩ রানে তিন উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। দিনের শুরুতেই এই জোড়া উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন নাহিদ।
বাংলাদেশের জন্য হুমকি হতে পারতেন কেসি কার্টি। তবে বিপদ হয়ে ওঠার আগে তাকে ফেরান পেসার হাসান মাহমুদ। ৪০ রান করে লিটনের তালুবন্দি হন কার্টি। ১০০ রানে চতুর্থ উইকেট হারানো ক্যারিবীয়রা পরবর্তী ২৩ রান তুলতেই হারায় আরও পাঁচ উইকেট। চোখের পলকে ১২৩ রানে আট উইকেটে পরিণত হয় স্বাগতিকরা।
নবম ব্যাটার হিসেবে শামার জোসেফকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। আর শেষ ব্যাটার হিসেবে কেমার রোচ যখন নাহিদের বলে উইকেট বিলিয়ে ফেরেন, বাংলাদেশ তখন এগিয়ে যায় ১৮ রানে।
ইনিংসে নাহিদের পাঁচ শিকারের পাশাপাশি হাসান মাহমুদ নেন দুই উইকেট। একটি করে উইকেট ঝুলিতে পোরেন মিরাজ, তাসকিন ও তাইজুল।