সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এবং তার পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনের সমাপ্তি ঘটেছে মাত্র ১২ দিনের বিদ্রোহী অভিযানে। বিদ্রোহীদের দ্রুত অগ্রযাত্রা এবং সরকারের পতন সিরিয়া এবং পুরো বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
বিদ্রোহীদের অভিযানের সূচনা
২৭ নভেম্বর ২০২৪ সালে বিদ্রোহীরা আলেপ্পো শহরে হামলা চালিয়ে তাদের অভিযান শুরু করে। সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি দীর্ঘদিন আসাদ সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। চার দিনের মধ্যেই বিদ্রোহীরা শহরের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নেয়। ১ ডিসেম্বর, তারা আলেপ্পোর কিছু কুর্দি অধ্যুষিত এলাকা বাদে বাকি অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এরপর বিদ্রোহীরা হামা শহরের দিকে অগ্রসর হয় এবং ৫ ডিসেম্বর সিরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহরটিও তাদের দখলে চলে যায়। ৭ ডিসেম্বর বিদ্রোহীরা দামেস্কের দিকে অভিযান শুরু করে।
রাজধানী দামেস্কের দখল
রোববার (৮ ডিসেম্বর) ভোরে বিদ্রোহীরা হোমস শহর দখল করে এবং দামেস্কে প্রবেশের ঘোষণা দেয়। এই সময় আসাদ সরকারের সেনারা বিদ্রোহীদের তীব্র আক্রমণের মুখে পিছিয়ে যায়। রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীদের হাতে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ব্যক্তিগত বিমানে করে পালিয়ে যান। তবে, তিনি কোথায় গেছেন তা এখনো জানা যায়নি।
দীর্ঘ শাসনের সমাপ্তি
আল-আসাদ পরিবারের শাসন শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালে বাশারের বাবা, হাফিজ আল-আসাদের হাত ধরে। প্রায় তিন দশক তিনি প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন। ২০০০ সালে তার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন বাশার আল-আসাদ। তার শাসনামলে দেশে আধুনিকীকরণের কিছু প্রচেষ্টা দেখা গেলেও তা শিগগিরই দমন-পীড়ন এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনে রূপ নেয়।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছালে বাশারের বিরুদ্ধে গণপ্রতিবাদ শুরু হয়। শুরুতে তরুণদের বিক্ষোভ হিসেবে যাত্রা শুরু করা আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নেয় পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে।
বিদ্রোহীদের ঘোষণা
বাশার সরকারের পতনের পর বিদ্রোহীরা এক বিবৃতিতে জানায়, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪, এক নতুন যুগের সূচনা হলো। বাথিস্ট শাসনের অধীনে ৫০ বছরের নিপীড়নের অবসান ঘটেছে। বিদ্রোহীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, নতুন শাসনব্যবস্থা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। তারা সকল নাগরিকের মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জুলানি বিদ্রোহী যোদ্ধাদের নির্দেশ দিয়েছেন আত্মসমর্পণকারী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে মানবিক আচরণ করার।
জনগণের উদযাপন
বাশার আল-আসাদের পতনের খবরে দামেস্কসহ বিভিন্ন শহরে জনগণের উদযাপন শুরু হয়। রাস্তায় রাস্তায় তারা বিজয়ের আনন্দ প্রকাশ করে। বিদ্রোহীদের বক্তব্য অনুযায়ী, তারা আসাদের শাসনের অবসান ঘটিয়ে সিরিয়ার ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
সিরিয়ার ভবিষ্যৎ
১৩ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে সিরিয়া এখন শান্তির নতুন স্বপ্ন দেখছে। তবে দেশটির পুনর্গঠন এবং নতুন শাসনব্যবস্থার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিদ্রোহীদের এই সফল অভিযান মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে এবং সিরিয়ার জনগণের জন্য এটি একটি নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স ও আল জাজিরা।