আজ ১৫ নভেম্বর। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আজ ১৭ বছর পূর্ণ হলো। ২০০৭ এদিন বাংলাদেশের উপকূলীয় ৩৫টি জেলায় আঘাত হানে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় সিডর। আঘাতের সময় সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। তবে এ সময় দমকা হাওয়ার বেগ উঠছিল ঘণ্টায় ৩০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। সিডরের প্রভাবে উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। ল-ভ- করেছিল উপকূল। শতাব্দীর ভয়াবহ ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল সাড়ে ৩ হাজার মানুষ। নিখোঁজ হয়েছিল সহস্রাধিক।
সরকারি হিসেব মতে, পানির স্রোতে ঘরবাড়ি ভেসে গেছে ২০ লাখ। প্রায় ৪০ লাখ একর জমির ফসল বিনষ্ট হয়। মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার গবাদি পশুর। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরায় মারা গেছে ৭০ হাজার গবাদি পশু।
খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণবেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা গ্রামের মো. মিজানুর রহমান জানান, উপকূলীর সকল রাস্তাঘাট নষ্ট হয়েছে সিডরের সময়। পরে আর সেই বেড়িবাঁধ আগের মতো হয়নি। যার প্রভাবে আজও আমাদের এলাকায় নদী ভাঙন হচ্ছে। লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে।
একই এলাকার সালেহা বেগম জানান, আমার ৭৫ বছরের বয়সের মধ্যে সিডরের মতো ঝড় দেখিনি। ঘর গোছানোর সময় দেয়নি। তার আগেই সব শেষ করে দিয়ে গেছে। আমি ঘরের মটকায় বেঁধে বেঁচে আছি। কিন্তু সব শেষ। ওই ঝড়ের পর আর এলাকায় মাটিতে গাছ গাছালি হচ্ছে না। বার বার ওয়াপদা ভেঙে পানি ঢুকছে। ঠেকানো যাচ্ছে না।
তৎকালিনে দক্ষিণবেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কমি শামসুর রহমান জানান, বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। আমাদের ইউনিয়নের চারিপাশের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। কোনটা নদী আর কোনটা লোকালয় তা বোঝা যেত না। সিডর হয়ে গেছে ১৭ বছর হচ্ছে। তবে তার দাগ আজও রয়ে গেছে। আমদের মনেও তার দাগ লেগে রয়েছে। ৭০ এর দশকের পর আর টেকসই বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়নি। যতটুকু ছিল তা তছনছ হয়ে যায় সিডরের সময়। ফলে এখন নতুন করে টেকসই বেঁড়িবাঁধ নির্মান প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর, এরপর ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২১ সালে ২৬ মে ইয়াস, ২০২২ সালের ১২ মে অশনি এবং ২০২৩ সালের ১৪ মে ‘মোখা’ আঘাত হানে। সর্বশেষ সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এটি ২০২৪ সালের ২৬ মে সন্ধ্যা থেকে ২৭ মে সকাল নাগাদ স্থলভাগ অতিক্রম করে।
সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব