আমরা কমবেশি সবাই মধু খেতে পছন্দ করি। কারণ, মধুর অনেক উপকারিতা রয়েছে। ত্বকের যত্নে ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা সারাতে মধু খুব ভালো কাজ করে। মধুতে প্রায় ৪৫টি বেশি খাদ্য উপাদান থাকে। আরও অনেক কাজেই মধু ব্যবহার হয়ে থাকে।
মধু হলো মিষ্টি ও ঘন তরল পদার্থ, যা মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি করে এবং মৌচাকে সংরক্ষণ করে। মধুতে উচ্চ ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি ভেষজ তরল থাকে এবং এটি সুপেয়। এ জন্যই মধু মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
খাঁটি মধু চেনার কৌশলগুলো
বর্তমানে প্রায় সব জিনিসেই ভেজাল পাওয়া যায়। মধুও তার বাইরে নয়। বাজারে মধু কিনতে গেলে আমরা অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ি যে কোনটা আসল মধু আর কোনটা ভেজাল। এ জন্য আগে খাঁটি মধু চেনার কৌশল জানতে হবে। তাহলেই ভেজাল মধু এড়িয়ে আসল মধু কেনা যাবে।
একনজরে ভেজাল মধু চেনার কৌশলগুলো জেনে নেওয়া যাক—
পানি পদ্ধতি
এ পদ্ধতির জন্য প্রথমে এক গ্লাস পানির মধ্যে এক চামচ মধু মেশাতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে নাড়তে হবে। যদি মধু পানির সঙ্গে মিশে যায়, তাহলে বুঝতে হবে এটি ভেজাল। আর যদি মধু না মিশে ছোট ছোট দলা হয়ে পানির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে এটি আসল।
পিঁপড়া পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে প্রথমে এক টুকরা কাগজে কিছু মধু লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর যেখানে পিঁপড়া আছে, সেখানে রেখে দিতে হবে। যদি পিঁপড়ারা ওই কাগজের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং ঘিরে ধরে, তাহলেই বুঝতে হবে এটি ভেজাল মধু। আর যদি পিঁপড়ারা এর ধারেকাছেও না আসে, তাহলে বুঝতে হবে এটি আসল মধু।
কাপড়ে দাগ পদ্ধতি
এক টুকরো সাদা কাপড়ে সামান্য মধু লাগিয়ে রাখুন। এরপর কাপড়টি শুকাতে দিন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ধোয়ার পর যদি কাপড়ে কোনো দাগ না থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এটি আসল মধু। আর যদি কাপড়ে দাগ থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এটি ভেজাল মধু।
ডিপফ্রিজ পদ্ধতি
একটি পাত্রে কিছুটা মধু নিয়ে ডিপফ্রিজে এক দিন রাখুন। এক দিন পর মধু বের করে দেখুন, যদি পুরোটা জমে যায় কিংবা কিছু অংশ জমে তাহলে বুঝবেন যে এটি ভেজাল মধু। কারণ, আসল মধু ঠান্ডায় জমে না।
অগ্নিপরীক্ষা
এক টুকরো তুলা নিতে হবে। তুলার এক প্রান্তে একটু মধু লাগিয়ে আগুন ধরাতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনটি ফল পাওয়া যাবে। প্রথমটি হলো—মধু লাগানো প্রান্তে যদি আগুন না জ্বলে, তাহলে বুঝবেন এটি ভেজাল মধু। দ্বিতীয়টি হলো—আগুন জ্বলবে, কিন্তু পটপট শব্দ হবে। এর মানে হলো মধুটি আসল, শুধু ভেতরে পানি মেশানো। শব্দ যত বেশি হবে, বুঝতে হবে পানি তত বেশি। তৃতীয়টি হলো—আগুন জ্বলবে, শব্দ হবে না। এর মানে হলো মধু্টি আসল এবং ভেজালমুক্ত।
বুড়ো আঙুলের পরীক্ষা
বুড়ো আঙুলে সামান্য মধু নিন। এরপর দেখুন, এটি অন্যান্য তরলের মতো ছড়িয়ে পড়ে কিনা। যদি ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে মধু খাঁটি না। কারণ, আসল মধু আঙুলের সঙ্গে ঘন হয়ে আটকে থাকবে। সহজে ছড়াবে না। আবার একটু বেশি পরিমাণ মধু নিয়ে বুড়ো আঙুল উল্টো করে ধরে রাখলে তা সহজে ফোঁটা আকারে পড়বেও না।
তাপমাত্রার পরীক্ষা
এ পদ্ধতিতে মধুকে তাপ দিতে হবে। যদি দেখেন তাপে মধু কেরামেলের মতো হয়ে যাচ্ছে, তাহলে বুঝবেন এটি আসল মধু। এটি ফোমের মতো ফেনিল হবে না। আর ভেজাল মধু কেরামেলের মতো হবে না, শুধু বুদবুদ উঠবে।