• রিজার্ভ ১০ বিলিয়নে নামলে চিন্তার
    প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেছেন, আমি এক সময় ভাবতাম আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না। কিন্তু আমাদের রিজার্ভ এখন ১৮ বিলিয়নের নিচে। এটা যদি ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায় তখন আইএমএফের সহায়তাও আমাদেরকে সেভ করতে পারবে না। আবার এমনও হতে পারে তখন আইএমএফ আমাদের সহায়তাও দেবে না। এটাই এখন চিন্তার বিষয়। গতকাল নিজস্ব কার্যালয়ে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সদস্যের সঙ্গে এক সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইআরএফ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সঙ্গে সংলাপ’। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। সংলাপে তিনি বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। রিজার্ভের ধারাবাহিক এ পতন যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় এবং সেটি ১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নাজুক পরিস্থিতির তৈরি হবে। দেশ বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান আরও বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ যেভাবে ধারাবাহিকভাবে কমছে, তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও তিনি মনে করেন যে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিঃসন্দেহে শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমাদের বড় একটি রপ্তানি খাত আছে। সেই সঙ্গে আছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়, যা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি। সে কারণে তিনি বিশ্বাস করেন না, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কখনো শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে। রিজার্ভের পতনে সরকারের কোনো নীতির দায় আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তার সবগুলো তার জানা নেই। তবে দৃশ্যমান উদ্যোগগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে যাদের সম্পর্ক তাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মালামাল নিয়ে একটি জাহাজ এলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জাহাজটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

    খুব বেশি না হলেও রপ্তানিতেও এর একটা প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। রেহমান সোবহান বলেন, বর্তমানে অনেক অর্থনীতিবিদ ডলারের বিনিময় হার থেকে তুলে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সরকারের পক্ষে এটি বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না। কারণ এতে করে আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে, যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাছাড়া তিনি নিজেও বিনিময় হার পুরোপুরি বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে নন। কারণ সামষ্টিক অর্থনীতিতে সফল দেশ ভারত, চীনসহ অন্যান্য দেশও বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করে।

    তিনি বলেন, রিজার্ভ ধরে রাখতে ইতোমধ্যে কিছু পণ্য আমদানি শুল্ক বাড়ানোর পাশাপাশি বিলাসী পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এ সংকটময় পরিস্থিতিতেও বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানি হচ্ছে। নীতি-নির্ধারকদের এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগে বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানি করা হবে নাকি ডিম, সার কিংবা সুতা আমদানি করা হবে। দেশের চলমান ডলার সংকট নিরসনে বিলাসী পণ্যের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শও দিয়েছেন। 

    এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের আর্থিক খাতের সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। ঋণ নেওয়ার পর ফেরত না দেওয়াটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এটা করার জন্য বড় ব্যবসায়ী নয়; বরং যারা এসব করছেন, তারা নিজেদের বড় রাজনীতিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। ঋণ খেলাপিদের অংশ নিতে দেওয়া হবে না, প্রত্যেক নির্বাচনের আগে এমন ঘোষণা দেওয়া হলেও এক্ষেত্রে পরবর্তীতে ছাড় দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অভাবে খেলাপিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্রমন্বয়ে ঋণ খেলাপের পরিমাণ বেড়ে চলেছে।

    তিনি বলেন, প্রচুর পরিমাণে লোক দেশের বাইরে গেলেও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে। তবে তার মানে এই নয় যে দেশে প্রবাসী আয় আসা বাস্তবে কমে গেছে। আনুষ্ঠানিক পথে না এসে অনানুষ্ঠানিক পথে আসছে প্রবাসী আয়, যার মূল মাধ্যম হুন্ডি। অর্থাৎ রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা না হয়ে হুন্ডিতে জমা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের বাইরে জমা হচ্ছে। যারা বিদেশে অর্থ পাচার করেন, তাদের জন্য এটা সুবিধাজনক হয়েছে।

    ইআরএফ সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে বেসরকারি উদ্যোক্তার মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ সময় উপযোগী ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব ছিল। এক্ষেত্রে সব ধরনের ঝুঁকি সরকারের আর লভ্যাংশ বেসরকারি খাতের। এমনকি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদনে না থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। এতে করে যেসব উদ্যোক্তা কোনোভাবেই এ খাত সংশ্লিষ্ট নয় তারাও বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের অবকাঠামোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সঞ্চালন লাইন গড়ে ওঠেনি। এতে করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ১০ বছরের মাথায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মডেল পর্যালোচনা করার দরকার ছিল। কিন্তু তা না করায় এখন এ খাতের বাড়তি ক্যাপাসিটি চার্জ সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।


  • বসুন্ধরায় নান্দনিক শিক্ষাঙ্গন

    দেশের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ এবার শিক্ষাক্ষেত্রে আবির্ভূত হচ্ছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এন ব্লকে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সুবিধা সংবলিত স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস। সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর ভূমিকা রাখবে আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে।

    আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিস্ময়। দেশের এই অগ্রযাত্রার অন্যতম সঙ্গী শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। ব্যবসার পাশাপাশি কল্যাণমূলক কাজে বসুন্ধরা গ্রুপ বরাবরই অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে। দেশের খেলাধুলাকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এরই মধ্যে চালু হয়েছে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স। বিশ্বমানের ক্রীড়া সুবিধা নিয়ে এ কমপ্লেক্সের একাধিক প্রকল্প এখনো চলমান। সব কিছুর পাশাপাশি এবার শিক্ষাক্ষেত্রে আবির্ভূত হচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কোল ঘেঁষে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এন ব্লকে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সুবিধা সংবলিত ক্যাম্পাস। প্রস্তাবিত বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজটিকে একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নেওয়া হচ্ছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। এ এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিন ধরেই এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা ছিল। রাজধানীর বুকে সবচেয়ে আধুনিক আবাসিক এলাকা হিসেবে বসুন্ধরা বছরের পর বছর ধরে সমাদৃত হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখতে এবং মানুষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এই মহতী উদ্যোগ। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান নিজে এই প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা। এর মাধ্যমে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন এক দিগন্তের সূচনা করতে যাচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। পরিকল্পনা অনেক দিন আগের হলেও মূল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। প্রায় ১০ বিঘা জমিজুড়ে এক নান্দনিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা গৃহীত হয়। সেই মহাপরিকল্পনা এখন অনেকটাই বাস্তবায়নের পথে। স্কুলের মূল সাত তলা ভবনটির কাজ প্রায় শেষের পথে। আশা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষ নাগাদ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। এর স্থাপত্য নকশা করেছেন স্থপতি মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ। আজকাল শহুরে পরিবেশে শিক্ষাঙ্গনের নিজস্ব খেলার মাঠ স্বপ্নের মতো। সে স্বপ্ন পূরণ করবে বসুন্ধরার এই শিক্ষাঙ্গনটি। শিক্ষার্থীদের জন্য চার বিঘা জমিজুড়ে খেলার মাঠ তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষা ভবনের ভিতরেও পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখা রয়েছে। প্রায় ১ হাজার বর্গফুটের আধুনিক পাঠদানকক্ষ থাকছে ৬৫টি। বিশেষায়িত শ্রেণিকক্ষ, কমন ক্লাস রুমও থাকছে। কনফারেন্স রুম, কমন রুম, আধুনিক ল্যাব, এক্সিবিশন হল, ক্যাফেটেরিয়া ছাড়াও থাকছে সাড়ে ৪ হাজার বর্গফুটের একটি লাইব্রেরি। প্রযুক্তি জ্ঞান ও হাতেকলমে আধুনিক পাঠদানের জন্য লাইব্রেরি ও ল্যাবরুমে থাকবে সব ধরনের আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সুযোগ-সুবিধা। সাড়ে ৪ হাজার বর্গফুটের একটি বড় ক্যাফেটেরিয়া ও শিক্ষকদের জন্য ১২টি টিচার্স রুম রয়েছে। ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার প্রতিটিতে ৪০ হাজার বর্গফুট এবং চতুর্থ থেকে সপ্তম তলার প্রতিটিতে ৩০ হাজার বর্গফুট জায়গা রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ ভবনটি। সুপরিসর স্কুল ও কলেজে একসঙ্গে ৫ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী শিক্ষাকার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষা ভবনের উত্তর দিকে বিশাল পার্কিং এরিয়া থাকছে। এ মহৎ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন রাউজক উত্তরা মডেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলম, এনডিসি, পিএসসি (অব.)। তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও আশপাশে যারা থাকেন তাদের মধ্যে এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা ছিল। এটি বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সনে আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে।’ প্রস্তাবিত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরুতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং পরবর্তীতে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। কো-এডুকেশনে মেয়েদের জন্য আলাদা সেকশন থাকবে। আগামী শিক্ষাবর্ষেই কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে সব ধরনের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। পাঠদানের পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মনোদৈহিক বিকাশে ভূমিকা রাখে। বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের পাশে গড়ে ওঠায় এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়াবিদদের সংস্পর্শে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবেন। ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের খেলার মাঠ, সুইমিং পুল ও শরীরচর্চার সুযোগ রয়েছে এখানে।  এ বিষয়ে কাজী শওকত আলম বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয় চান, শিক্ষার পাশাপাশি যেহেতু এখানে খেলাধুলার সব ধরনের সুযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীরা যেন তার পুরো সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন।’


  • রিজার্ভ ১০ বিলিয়নে নামলে চিন্তার
    প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বলেছেন, আমি এক সময় ভাবতাম আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না। কিন্তু আমাদের রিজার্ভ এখন ১৮ বিলিয়নের নিচে। এটা যদি ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায় তখন আইএমএফের সহায়তাও আমাদেরকে সেভ করতে পারবে না। আবার এমনও হতে পারে তখন আইএমএফ আমাদের সহায়তাও দেবে না। এটাই এখন চিন্তার বিষয়। গতকাল নিজস্ব কার্যালয়ে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সদস্যের সঙ্গে এক সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইআরএফ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সঙ্গে সংলাপ’। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। সংলাপে তিনি বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। রিজার্ভের ধারাবাহিক এ পতন যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় এবং সেটি ১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নাজুক পরিস্থিতির তৈরি হবে। দেশ বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান আরও বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ যেভাবে ধারাবাহিকভাবে কমছে, তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও তিনি মনে করেন যে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিঃসন্দেহে শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমাদের বড় একটি রপ্তানি খাত আছে। সেই সঙ্গে আছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়, যা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি। সে কারণে তিনি বিশ্বাস করেন না, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কখনো শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে। রিজার্ভের পতনে সরকারের কোনো নীতির দায় আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তার সবগুলো তার জানা নেই। তবে দৃশ্যমান উদ্যোগগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে যাদের সম্পর্ক তাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মালামাল নিয়ে একটি জাহাজ এলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জাহাজটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

    খুব বেশি না হলেও রপ্তানিতেও এর একটা প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। রেহমান সোবহান বলেন, বর্তমানে অনেক অর্থনীতিবিদ ডলারের বিনিময় হার থেকে তুলে দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সরকারের পক্ষে এটি বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না। কারণ এতে করে আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে, যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাছাড়া তিনি নিজেও বিনিময় হার পুরোপুরি বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে নন। কারণ সামষ্টিক অর্থনীতিতে সফল দেশ ভারত, চীনসহ অন্যান্য দেশও বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করে।

    তিনি বলেন, রিজার্ভ ধরে রাখতে ইতোমধ্যে কিছু পণ্য আমদানি শুল্ক বাড়ানোর পাশাপাশি বিলাসী পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এ সংকটময় পরিস্থিতিতেও বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানি হচ্ছে। নীতি-নির্ধারকদের এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগে বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানি করা হবে নাকি ডিম, সার কিংবা সুতা আমদানি করা হবে। দেশের চলমান ডলার সংকট নিরসনে বিলাসী পণ্যের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শও দিয়েছেন। 

    এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের আর্থিক খাতের সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। ঋণ নেওয়ার পর ফেরত না দেওয়াটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এটা করার জন্য বড় ব্যবসায়ী নয়; বরং যারা এসব করছেন, তারা নিজেদের বড় রাজনীতিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। ঋণ খেলাপিদের অংশ নিতে দেওয়া হবে না, প্রত্যেক নির্বাচনের আগে এমন ঘোষণা দেওয়া হলেও এক্ষেত্রে পরবর্তীতে ছাড় দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অভাবে খেলাপিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্রমন্বয়ে ঋণ খেলাপের পরিমাণ বেড়ে চলেছে।

    তিনি বলেন, প্রচুর পরিমাণে লোক দেশের বাইরে গেলেও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে। তবে তার মানে এই নয় যে দেশে প্রবাসী আয় আসা বাস্তবে কমে গেছে। আনুষ্ঠানিক পথে না এসে অনানুষ্ঠানিক পথে আসছে প্রবাসী আয়, যার মূল মাধ্যম হুন্ডি। অর্থাৎ রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা না হয়ে হুন্ডিতে জমা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের বাইরে জমা হচ্ছে। যারা বিদেশে অর্থ পাচার করেন, তাদের জন্য এটা সুবিধাজনক হয়েছে।

    ইআরএফ সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে বেসরকারি উদ্যোক্তার মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ সময় উপযোগী ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব ছিল। এক্ষেত্রে সব ধরনের ঝুঁকি সরকারের আর লভ্যাংশ বেসরকারি খাতের। এমনকি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদনে না থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। এতে করে যেসব উদ্যোক্তা কোনোভাবেই এ খাত সংশ্লিষ্ট নয় তারাও বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের অবকাঠামোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সঞ্চালন লাইন গড়ে ওঠেনি। এতে করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ১০ বছরের মাথায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মডেল পর্যালোচনা করার দরকার ছিল। কিন্তু তা না করায় এখন এ খাতের বাড়তি ক্যাপাসিটি চার্জ সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।


  • প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় ভাঙ্গাবাসী

    আনন্দে উদ্বেলিত ভাঙ্গাবাসী। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আজ ভাঙ্গায় আসছেন। ভাঙ্গা পৌর শহরের ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি বক্তব্য রাখবেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী জনসভা করতে ভাঙ্গায় এসেছিলেন। প্রায় ৫ বছর পর তিনি ভাঙ্গায় আসছেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাঙা ভাব দেখা যাচ্ছে। ভাঙ্গা সেজেছে অপরূপ সাজে। ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল পর্যন্ত অসংখ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। বিল বোর্ড টানানো হয়েছে অগণিত। ভাঙ্গা ও আশপাশের উপজেলায় জনসভা সফল করার লক্ষ্যে একাধিক কর্মিসভা করেছে আওয়ামী লীগ। ভাঙ্গায় কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ করেছে বিশেষ বর্ধিত সভা। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী আজ সকাল ১০টায় গণভবন থেকে সড়কপথে মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। বেলা ১১টায় মাওয়া রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হবেন। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া রেলওয়ে স্টেশনে পদ্মা সেতু সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। দুপুর পৌনে ১টায় রেলপথে মাওয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। দুপুর পৌনে ২টায় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হবেন। দুপুর ২টায় ভাঙ্গা ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হবেন। বিকাল ৪টায় সড়কপথে ভাঙ্গা থেকে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হবেন। ভাঙ্গা পৌরসভার ছিলাধরচর মহল্লার কৃষক হারুন মিয়া বলেন, ভাঙ্গা এলাকা পাট, পিঁয়াজ, মরিচসহ তরিতরকারি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। প্রধানমন্ত্রী আমাদের রেলপথ উপহার দিয়েছেন। পদ্মায় সেতু নির্মাণ করেছেন। আমরা এখন অল্প খরচেই আমাদের উৎপাদিত পণ্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতে পারব। লাভবান হবে এ এলাকার কৃষকরা। ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক পান্না বালা বলেন, ফরিদপুর একটি প্রাচীন জনপদ এবং পুরনো জেলাগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জেলা। ১৯৮৩ সাল থেকে ফরিদপুরবাসী একটি বিভাগ বাস্তবায়নে আন্দোলন করে আসছে। ফরিদপুরবাসীর পক্ষ থেকে ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নের দাবি করছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে।


  • ইসরায়েলকে সমর্থন করে তোপের মুখে কাইলি জেনার

    ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের অতর্কিত হামলার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে গোটা বিশ্ব। এই হামলার পক্ষে-বিপক্ষে দুই ভাগে বিভক্ত সবাই। এই অতর্কিত হামলা ও পরবর্তী সময়ে ইসরায়েলের পাল্টাহামলা প্রসঙ্গে তারকারাও নিজেদের আওয়াজ তুলেছেন।

    হলিউড, বলিউড থেকে শুরু করে বিশ্বের অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় তারকারা নিজ নিজ জায়গা থেকে সমর্থন ও নিন্দা করছেন এই যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতির। কেউ কেউ প্রকাশ্যে সহমর্মিতা প্রকাশ করে সমর্থন করছেন ইসরায়েলকে। সেই তালিকায় রয়েছেন টিভি ব্যক্তিত্ব এবং মেকআপ উদ্যোক্তা কাইলি জেনার। তবে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন করে রীতিমতো তোপের মুখে পড়েছেন কাইলি।

    শনিবার ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর কাইলি ইসরায়েলের পতাকার একটি ছবি শেয়ার করেছেন সামাজিক মাধ্যমে। ছবিটি শেয়ার করে কাইলি লিখেছেন, ‘এখন এবং সর্বদা, আমরা ইসরায়েলের জনগণের পাশে আছি।’ কাইলির এই পোস্টে রীতিমতো সমালোচনার ঝড় তোলে ফিলিস্তিন এবং হামাসের পক্ষে সমর্থনকারী ব্যক্তিরা। সমালোচনার মুখোমুখি হওয়ার পরে কাইলি তার পোস্টটি মুছে দেন।

    তবে তার পোস্টের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। আর সেই স্ক্রিনশট শেয়ার করেই কাইলিকে আক্রমণ করা হচ্ছে। সমালোচনার বোমাবর্ষণ চলছে জনপ্রিয় এই টিভি ব্যক্তিত্বের ওপর। রাজনৈতিক বিষয়ে নিজেকে জড়িত করার জন্য এবং ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার জন্য তার সমালোচনা করছে বেশির ভাগ মানুষ। কেউ কেউ ফিলিস্তিনি পতাকা পোস্ট করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।


  • ডাচদের ৯৯ রানে হারাল নিউজিল্যান্ড

    চলতি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ষষ্ঠ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ৯৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। শুরুতে ব্যাট করে ডাচদের ৩২৩ রানের টার্গেট দেয় কিউইরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২২৩ রানেই গুটিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস।

    নেদারল্যান্ডসের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৯ রান করেছেন কলিন আকেরমান। এছাড়া কোনো ব্যাটারই আর ৪০ ছোঁয়া ইনিংসও খেলতে পারেননি।

    ‍ব্ল্যাক ক্যাপসদের হয়ে মিচেল স্যান্টনার নিয়েছেন ৫ উইকেট। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া ম্যাট হেনরিও নিয়েছেন ৩ উইকেট।

     

    শুরুতে হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে উইল ইয়াং, রাচিন রবীন্দ্র ও টম ল্যাথামের ফিফটির সৌজন্যে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ৩২২ রান করেছে নিউ জিল্যান্ড।

    নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৭০ রান করেন ইয়াং। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা রবীন্দ্র এ দিন খেলেন ৫১ রানের ইনিংস। শেষ দিকে ল্যাথামের ব্যাট থেকে আসে ৫৩ রান।