হাত খরচের জন্য মাকে হত্যা, সাজালো ডাকাতির নাটক
ডাকাত নয়, বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় হাত খরচের টাকা নিয়ে বিরোধে ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজুর (১৯) তার মা উম্মে সালমা খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। হত্যার পর ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে লাশ বাড়ির ডিপ ফ্রিজে রেখে দেয় ঘাতক ছেলে। পরে তা ডাকাতি বলে প্রচারের চেষ্টা করে।
র্যাব-১২ বগুড়া কোম্পানির সদস্যরা সোমবার (১১ নভেম্বর) মধ্য রাতে তাকে পার্শ্ববর্তী কাহালু উপজেলার পাঁচপীর আড়োবাড়ি এলাকায় দাদা রমজান মোল্লার বাড়ি থেকে আটক করে। আটকের পর র্যাব কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে সাদ।
আটক সাদ বিন আজিজুর রহমান তার বাবার পরিচালানাধীন একটি মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
নিহত উম্মে সালমা খাতুন দুপচাঁচিয়া ডিএস (দারুস সুন্নাহ) কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আজিজুর রহমানের স্ত্রী। আজিজুর রহমান স্থানীয় উপজেলা মসজিদের খতিব এবং ‘আজিজিয়া হজ কাফেলা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। সন্তানদের মধ্যে সাদ ছোট। তাকে নিয়ে আজিজুর দম্পতি দুপচাঁচিয়া উপজেলার সদরে জয়পুরপাড়া এলাকায় নিজেদের চার তলা বাড়ি ‘আজিজিয়া মঞ্জিল’-এর তৃতীয় তলায় থাকতেন। অন্য সন্তানরা ঢাকায় থাকেন।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে র্যাবের বগুড়া ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান র্যাব বগুড়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর এহতেশামুল হক খান।
ব্রিফিংয়ে এ র্যাব কর্মকর্তা জানান, মাদ্রাসা ছাত্র সাদ বিন আজিজুর প্রেম করেন। এ ছাড়া সে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। হাত খরচের টাকার জন্য মায়ের সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হয়। এ ছাড়া মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে টাকা হারিয়ে যেত। ঘটনার দিন হাত খরচের টাকা চেয়ে না পাওয়ায় সাদ তার মাকে হত্যা করে। পরে তা ডাকাতি বলে প্রচারের চেষ্টা করে।
যেভাবে মাকে হত্যা করে সাদ
সাদ রবিবার (১০ নভেম্বর) সকালে মা সালমার কাছে টাকা চেয়ে না পাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়। সে তার মাকে হত্যা করে ডাকাতদের কাজ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। নাশতা না করেই বাড়ির বাইরে চলে যায়। মাদ্রাসায় না গিয়ে আশপাশে অবস্থান করার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়িতে আসে। এ সময় মা বটি দিয়ে কুমড়া কাটছিলেন। পরিকল্পনা অনুসারে পেছন থেকে মায়ের নাক ও মুখ চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে বটি দিয়ে সাদের তর্জনী আঙুল কেটে যায়। এরপরও সে দুই হাত দিয়ে নাক ও মুখ চেপে ধরলে শ্বাসরোধে মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যার ঘটনা ডাকাতি হিসেবে প্রচার করতে ওড়না দিয়ে মায়ের দুই হাত-পা বেঁধে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখে।
ডাকাতির প্রমাণ হিসেবে কুড়াল দিয়ে আলমিরাতে কয়েকটি কোপ দেয়। এরপর প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে ফিরে মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে বাবা আজিজুর রহমানকে ফোনে ডেকে আনে। পরে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ উম্মে সালমা খাতুনের লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পুলিশের সন্দেহ
খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তবে বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা কিংবা স্বর্ণালঙ্কার খোয়া না যাওয়ায়, এমনকি মৃতের কানে থাকা স্বর্ণের দুল অক্ষত থাকায় পুলিশের সন্দেহ হয়। ওই দিন রাতে সাদকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
দুপচাঁচিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ফরিদুল ইসলাম জানান, ওই গৃহবধূ হত্যায় এখনও মামলা হয়নি। তবে নিহতের বড় ছেলে বাদি হয়ে এজাহার করবেন বলে জানানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন