হেঁটেই পদ্মা পারাপার
রাজশাহীর বাঘায় আট চরের মানুষ এখন পদ্মা নদী হেঁটেই পারাপার হচ্ছেন। গত চার মাস আগেও নৌকা দিয়ে পারাপার করতে হতো। এখন শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নদীতে পানি নেই। মানুষ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য হেঁটেই নদী পারাপার হচ্ছেন।
এমন দৃশ্য দেখা যায় সোমবার উপজেলার সড়কঘাট এলাকার পদ্মা নদীর ঘাটে।
জানা গেছে, উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের ৮টি চরে প্রায় ১৮ হাজার মানুষের বসবাস। এই চরের মানুষ বর্তমানে হেঁটেই পারাপার হন। বর্ষা মৌসুমে তারা পানিবন্দি হয়ে যান। এ সময়ে শত শত একর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়েও যায়। একইসঙ্গে অসময়ে তীব্র নদী ভাঙনের ফলে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে।
বর্ষা মৌসুমে নদী পারাপারে একমাত্র ভরসা নৌকা। প্রতি বছর খরস্রোতা পদ্মা নদী পারাপারে নৌকা ডুবিতে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় খরস্রোতা পদ্মা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার সড়কঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লোকজন হেঁটেই নদী পারাপার হচ্ছেন। বর্ষা মৌসুমে এই ঘাটে প্রতিদিন নৌকাযোগে শত শত লোক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ নদী পারাপার হতেন।
পাকুড়িয়া ইউনিয়নের জোতকাদিরপুর গ্রামের নারী শ্রমিক সোনাভান বেগম, আনেরা বেগম, জামেনা বেগম, আনেমা বেগম হেঁটেই নদী পার হচ্ছেন। এ সময় তারা বলেন, পদ্মার চরে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজের আবাদ হয়। পেঁয়াজ তোলা কাজ করে হেঁটেই বাড়ি ফিরছি। প্রতি মণ পেঁয়াজের পাতা কাটলে ৭০ টাকা দেন। এর মধ্যে আনেরা বেগম ৫ মণ পেঁয়াজের পাতা কেটেছেন। তিনি রোজগার করেছেন ২৫০ টাকা। তার স্বামী জমির উদ্দিন অসুস্থ। কোনো কাজ করতে পারে না। ছেলেরা বিয়ে করে অন্যত্রে চলে গেছেন। ফলে নিরুপায় হয়ে পড়েছি। পেট আছে খেতে হবে। প্রতিদিন সকালে পদ্মা নদী হেঁটে পার হয়ে পেঁয়াজের পাতা কাটার কাজ করি।
আরেক নারী শ্রমিক সোনাভান বেগম বলেন, নিয়মিত যাতায়াত করি। কিছুদিন আগেও নৌকায় করে যাতায়াত করতে হতো। এখন নদীতে পানি নেই, তাই হেঁটে গিয়েই কাজ করে বাড়ি আসছি।
কালিদাসখালী চরের গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রতি বছর খরস্রোতা পদ্মা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বন্যাসহ নদীভাঙনে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে উভয় সংকটে পড়তে হয়েছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, এক সময় প্রমত্ত পদ্মার গর্জনে মাঝি-মাল্লারা সাহস পায়নি নৌকা চালাতে। এমনকি জেলেরা সাহস পায়নি মাছ ধরার নৌকা চালাতে। শুধু তাই না, অনেক সময় পদ্মার বিশাল ঢেউ আর ভয়ঙ্কর গর্জনের মুখে নৌকা চলতে সাহস পায়নি; কিন্তু কালের আবর্তনে সেই প্রমত্ত পদ্মা এখন শুকিয়ে শীর্ণ একটি খালে পরিণত হয়েছে। পদ্মার বুকজুড়ে জেগে ওঠেছে ধু-ধু বালুচর ও ফসলের মাঠ।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ান বলেন, সড়কঘাটের খেয়াঘাট থেকে চকরাজাপুরের দূরত্ব প্রায় ৪ কিলোমিটার। ২ মাস আগেও হাজার হাজার চরের মানুষ ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এই খেয়াঘাট থেকে নৌকাযোগে পদ্মা নদী পার হয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতেন। মাত্র ২ মাসের ব্যবধানে পদ্মা শুকিয়ে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। ফলে এলাকাবাসী পদ্মার চর হেঁটেই পারাপার হচ্ছেন।
আপনার মতামত লিখুন