শ্যামনগরে লাইসেন্স বিহীন সুন্দরবন এ্যাপোলো হাসপাতালে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যু


Admin প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২, ১২:০৮ পূর্বাহ্ন / ৯৪
শ্যামনগরে লাইসেন্স বিহীন সুন্দরবন এ্যাপোলো হাসপাতালে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যু

আনাড়ি ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করাতে গিয়ে শ্যামনগর সদরের উপকণ্ঠে সুন্দরবন অ্যাপোলো হাসপাতালে রাবেয়া খাতুন নামের এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি হাসপাতাল। যার মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের নেই কোন সরকারি অনুমোদন। আবার কয়েকটি লাইসেন্স বিহীন প্রতিষ্ঠান চালানো হচ্ছে সরকার দলীয় নেতাদের নাম ভাঙিয়ে।

মাত্র কয়েক মাস ব্যাবধানে শ্যামনগর সদরে হায়বাতপুর মোড়ে গড়ে উঠা সুন্দরবন এ্যাপোলো হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারটি । সরকারি অনুমোদন না থাকার পরও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় বহাল তবিয়তে ক্লিনিক খুলে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কসাইখানা নামক এই প্রতিষ্ঠানটি । হাসপাতালটির চেয়ারম্যান নামমাত্র ফিজিওথেরাপিস্ট শাহজাহান সিরাজ আদতে ডাক্তার না হয়েও নামের পাশে ভূয়া উপাধি সংযুক্ত করছেন ডাঃ মোঃ শাহজাহান সিরাজ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও পরিচালক কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও থেরাপি বিভাগ কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল- ঢাকা।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়,গত ‌শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের বড়কুপট গ্ৰামের মৃত, মোকবুল হোসেন মালীর স্ত্রী রাবেয়া খাতুন (৬৪) জরায়ু সমস্যা জড়িত কারণে এপোলো হাসপাতালে ভর্তি হন। সরকারি আইনি বিধিমতে, একজন রোগীকে অপারেশন করার জন্য এক জন ডাক্তার,একজন এ্যানেস্তেসিয়া, একজন এসিস্ট্যান্ট থাকার বিধান আছে । উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইনস্থাসিস্ট ডাক্তার ডাঃ অজিত রায় থাকার সত্ত্বেও উনাকে ডাকা হয়নি। অন্যদিকে তাদের প্রতিষ্ঠানের কোন ইনস্থাসিস্ট ডাক্তার নেই। অথচ ডাঃ সুব্রত কুমার মন্ডল ইনস্থাসিস্ট ডাক্তার ছাড়াই এলাকার হাতুড়ি ডাক্তার দিয়ে এ্যানেস্তেসিয়া কাজ মিটিয়ে রোগীকে অপারেশন করে তার কর্মস্থল খুলনাতে চলে যান। অপারেশনের পর থেকে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর অবনতি হয়। রুগীর পর্যাপ্ত চিকিৎসা না দেওয়ার ফলে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে গত শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল আনুমানিক ১২ টার সময় সুন্দরবন এ্যাপোলো হাসপাতালে রাবেয়া খাতুনের মৃত্যু হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, রোগীর মৃত্যুর আধা ঘন্টা আগে একটি ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয় এবং তার কিছুক্ষণ পরে রোগীটি মারা যায়। রোগীর মৃত্যুর পর তার স্বজনরা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কে বিভিন্ন অভিযোগ দিতে থাকে। কতৃপক্ষ বিয়টি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করে। এক পর্যায়ে তাদেরকে স্বজনদের বুঝাতে সক্ষম হয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ক্লিনিক কতৃপক্ষ মৃত রাবেয়া খাতুনের স্বজনদের বুঝায় যে মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হলে থানা পুলিশ হবে এবং থানা পুলিশ হলে লাশ ময়নাতদন্তে নেওয়া হবে। মৃত রাবেয়া খাতুনের স্বজনরা জটিলতা এড়িয়ে তাদের কথা মেনে নেয়।

এরপর সন্ধ্যায় একটি বেসরকারি এম্বুলেন্সযোগে লাশটিকে অতিগোপনে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয় । এ সংবাদ জানাজানি হলে সাংবাদিকেরা সন্ধ্যার পর সুন্দরবন এ্যাপোলো হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে উক্ত হাসপাতালে চেয়ারম্যান ফিজিওথেরাপিস্ট শাহজাল সিরাজ সাংবাদিকদের কোন প্রকার তথ্য না দিয়ে উল্টো বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায় । একপর্যায়ে শাহজাহান সিরাজ সাংবাদিকদের কাছে একটি রোগী মৃত্যু হয়েছে স্বীকার করলেও তথ্য গোপন করে বলেন রোগীটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল এবং ডাঃ সুব্রত কুমার মন্ডল এর আত্মীয়। তিনি এ সময় তাদের রেজিস্টার খাতায় রোগীর পূর্ণ নাম ঠিকানা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর সভাপতির নাকি তথ্য বাইরে দেওয়া বিধিনিষেধ আছে। সে সময় তার কাছে তাদের সভাপতির সেল ফোন নম্বর চাইলে তিনি বলেন সেটিও আমি দিতে পারবো না। অপারেশনের সময় এ্যানেস্তেসিয়া ডাক্তার কে ছিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডক্টর ফরহাদ হোসেন ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি অফিস কক্ষ থেকে উঠে চলে যান এবং কর্তৃপক্ষকে কোন প্রকার তথ্য দিতে নিষেধ করে দেয় । তথ্য অনুসন্ধান করতে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গেলে সেখানে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান সিরাজের কোন কথার মিল পাওয়া যায়নি। মারা গিয়েছে একজন মুসলিম রাবেয়া খাতুন অথচ তিনি তথ্য গোপন করে বানিয়ে দিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলা। এবং মৃত্যু মুসলিম রাবেয়াকে বানিয়েছেন ডাক্তার সুব্রত কুমার মন্ডলের আত্মীয়।

তবে মৃত রাবেয়া খাতুনের পরিবারের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন,যেটা হবার হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে চাই না। আমাদের কোন অভিযোগ নেই।

এ বিষয়ে এমবিবিএস এ্যানস্তেসিয়া ডাঃ ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, শ্যামনগরে সুন্দরবন এপোলো হাসপাতাল বলে কোন প্রতিষ্ঠান আছে কিনা আমার জানা নেই। আমি শ্যামনগরে গিয়েছি বছর দুয়েক আগে। তিনি তার নাম ব্যবহারের জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

বিষয়টি জানার জন্য এমবিবিএস ডাক্তার সুব্রত কুমার মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রোগীর অপারেশন যথাযথ হয়েছিল কিন্তু রোগীটি হার্ট স্ট্রোকজনিত  কারণে মৃত্যুবরণ করে ।

এ বিষয়ে শ্যামনগর প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এসোসিয়েশনের সভাপতি জিয়াউল হক পলাশ বলেন, সাংবাদিকদের তথ্য দিতে আমার কোন বিধি নিষেধ  নেই । আমি বিষয়টি শোনার পর অ্যাপোলো হাসপাতালে চেয়ারম্যান কে দুইবার ফোন দিয়েছি কিন্তু ফোনটি রিসিভ হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প,প কর্মকর্তা ডঃ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি , ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত টিম গঠন করা হবে। উনার ভাষ্য অনুযায়ী ক্লিনিক টি এখনো লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়নি।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান যে, প্রতিনিয়ত এই হসপিটাল থেকে মানুষের প্রায় এমন অভিযোগ পাওয়া যায় চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা । হসপিটালের পরিচালক কিছু অনভিজ্ঞ ভূয়া পল্লী চিকিৎসক ও লোকজন ভাড়া করে রেখেছেন তাদের কমিশন দিয়ে রোগী বাগিয়ে হসপিটালে আনার ব্যবস্থা করেন এবং তারপর একবার রোগী ভর্তি করার পরে শুরু হয় তাদের পৈশাচিক  আসল রূপ। চিকিৎসার নামে তাদের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ বানিয়ে নেয়। রোগীর সেবার মান সর্বনিম্ন এই হসপিটালে। একবার রোগী ভর্তি হলে কসাই এর মত  আচরণ করে রোগী পক্ষের মানুষদের জিম্মি করে খরচের চেয়ে বহুগুণ টাকা আদায় করে। এমতঅবস্থায় ভুক্তভোগীর স্বজন ও শ্যামনগরের সর্বস্তরের সচেতন  জনগণ বিষয়টি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ও প্রশাসনের  আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।