খুঁজুন
মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বহুমুখী তদবিরে চাপে প্রশাসন

সুন্দরবন নিউজ২৪ ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ১০:২০ পূর্বাহ্ণ
বহুমুখী তদবিরে চাপে প্রশাসন

সম্প্রতি একজন দুর্নীতিগ্রস্ত তহশিলদারকে পৌর ভূমি অফিস থেকে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলি করে জেলা প্রশাসন। তার বদলি ঠেকাতে সাবেক একজন মন্ত্রী ও একটি রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতা মরিয়া হয়ে তদবির করতে থাকেন। বদলি ঠেকাতে স্থানীয় একাধিক সাংবাদিকও জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নানা চাপ ও হুমকি দেন। এর পরও বদলি ঠেকানো যায়নি। তবে ডিসিকে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। এভাবে সরকারের মাঠ প্রশাসন থেকে কেন্দ্রীয় প্রশাসন পর্যন্ত বদলি-পদায়ন কিংবা ঠিকাদারির তদবির চলছে। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময়ে তদবির হতো একমুখী। এখন সরকার সমর্থক নানা গোষ্ঠী ও দেশের সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতার কাছ থেকে বহুমুখী তদবির হচ্ছে। তদবিরের চাপে হাঁপিয়ে উঠেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেন, টানা সাড়ে ১৫ বছরে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে তা দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। আওয়ামী ঘরানার কিংবা শীর্ষ কর্মকর্তাদের পছন্দের না হলে মিলত না পদোন্নতি কিংবা পদায়ন। প্রবল জনআকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনকে দলীয় ও তদবিরমুক্ত করবে—এমন প্রত্যাশা ছিল সবার। কিন্তু এমন আশার গুড়ে বালি দিয়ে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ও বহুমুখী তদবিরের বোঝা মাথায় নিয়েই চলছে হাসিনার দুঃশাসনকালে রেখে যাওয়া ভঙ্গুর প্রশাসন।

তদবিরে এগিয়ে রাজনীতিকরা: কর্মকর্তারা বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর শুধু আওয়ামী লীগ, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। সব ধরনের তদবির, আদেশ-নিষেধ ছিল একমুখী। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া রাজপথে সক্রিয় রাজনৈতিক দলের নেতারাই এখন তদবির করে বেড়াচ্ছেন। বদলি, পদোন্নতি কিংবা ঠিকাদারির কাজ পাইয়ে দেওয়ার মতো সচিবালয়কেন্দ্রিক এসব তদবির অতীতের চেয়ে বেড়েছে। বড় দলগুলোর নেতাদের প্রায়ই সচিবালয়ে দেখা যায়। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলোর নেতারা প্রশাসনে প্রভাব খাটিয়ে চলেছেন। তারা নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় পছন্দের ডিসি-এসপি নিয়োগ দিতে তদবির করে বেড়াচ্ছেন। এ ছাড়া বদলি-পদায়ন কিংবা ঠিকাদারি কাজের পেছনে দৌড়াচ্ছেন রাজনীতিকরা। বড় দলের নেতাদের পাশাপাশি ছোট নতুন-পুরোনো দলের শীর্ষ নেতাদের সচিবালয়ে দেখা যাচ্ছে। নেতারা আওয়ামী লীগের শাসনামলে সুবিধা নেওয়া দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জন্যও তদবির করছেন।

তারা আরও বলেন, চতুর্মুখী তদবিরের যন্ত্রণায় প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। প্রায় ২ হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতনের পরও তদবিরবাজি চলছে বলে মনে করেন তারা।

সাবেক সচিব ও প্রশাসন বিশ্লেষক একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদার কালবেলাকে বলেন, তদবির করা অযোগ্যতা। নীতি-নৈতিকতাহীন কাজ। যারা তদবির করতে আসেন তাদের বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রক্রিয়াটা মনে রাখা উচিত। সরকার শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সুতরাং নীতিবিরুদ্ধ তদবির-দৌড়ঝাঁপ থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে। যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসাতে হবে। তাহলে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারবে সরকার।

দৌড়াচ্ছেন প্রভাবশালী কর্তারা: বিএনপি-জামায়াতপন্থি হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারা গত ৫ আগস্টের পর দাপটের সঙ্গেই চাকরি করছেন। এরই মধ্যে তাদের অনেকেই পছন্দের দপ্তরে পদায়ন নিয়েছেন। নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে পদোন্নতিও পেয়েছেন। প্রশাসনে এখন তারা প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন। নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের পর তারা সহকর্মী-ব্যাচমেট কিংবা স্বজনদের জন্য দৌড়াদৌড়িতে ব্যস্ত। কে কোন দপ্তরে যাবেন, তা তারা ঠিক করছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সময়ে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা কর্মকর্তাদের জন্যও অনেকে তদবির করছেন। ফলে পতিত সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত অনেক কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তে বড় বড় দপ্তরে বসে আছেন। ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে এসব কর্মকর্তার এমন দৌড়ঝাঁপকে নীতিবিরুদ্ধ বলে মনে করছেন প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের চাপে মাঠ কর্তারা: মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তদবিরের চাপে অতিষ্ঠ। স্থানীয় রাজনীতিকদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদের তদবির ও চাপকে ভয় হিসেবেই দেখেন কর্মকর্তারা। ফলে অনেক অযৌক্তিক তদবির রাখতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। স্থানীয় সাংবাদিকরাও তাদের নানা আবদার নিয়ে আসেন। এগুলো রাখলেও বিপদ, না রাখলেও ভয়ে থাকতে হয়। কখন কে নেতিবাচক নিউজ করে দেয়!

বিরক্ত উপদেষ্টারা: বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনীতিবিদের লাগামহীন তদবিরে চরম বিরক্ত সরকারের উপদেষ্টা ও সচিবরা। তারা বলছেন, তদবিরের চাপ এতই বেশি যে, ঠিকমতো কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু সবাই যেভাবে তদবির ও নিজেদের সুবিধার জন্য আসেন, তা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করার শামিল।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ক্ষোভ জানিয়ে তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে লেখেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বলেছিলাম, ব্যক্তিগত তদবির-আবদার নিয়ে কেউ আসবেন না। এখনো প্রতিদিন যদি ৫০ জন দেখা করতে আসেন, তার মধ্যে ৪৮ জনই আসেন নানারকম তদবির নিয়ে। আমাদেরও নতুন বাংলাদেশের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়তে হবে। ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে দেশের স্বার্থে ত্যাগের মানসিকতা, কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে শহীদদের স্পিরিটকে ধারণ করে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের কাছে প্রতিদিন নানা ধরনের তদবির আসছে, এটা ঠিক। এতে খুব অসুবিধাও হচ্ছে। কাজের ক্ষতি হচ্ছে। তবে সিদ্ধান্তটা কিন্তু আমরাই নিচ্ছি। তদবির করলেই সেটি গুরুত্ব পাবে, বিষয়টি তেমন নয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, সরকারি খাতে পদোন্নতি, বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে আর্থিক লেনদেনসহ যে তদবির, এটি বাংলাদেশে দীর্ঘ সময়ের প্রশাসনিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী সরকারে গত ১৬ বছরে তা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাজনৈতিক ভিত্তি নেই, এটি দলনিরপেক্ষ সরকার হলেও তার ক্ষমতার বহুমাত্রিক স্তম্ভ রয়েছে। এখানে যেহেতু একাধিক ক্ষমতার ভিত্তি রয়েছে, যারাই নিজেদের কোনোভাবে ক্ষমতার ভিত্তি মনে করছেন তারাই সুযোগটা নিচ্ছেন। যেহেতু দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতি, সেটা একটা কারণ সুযোগটি নেওয়ার এবং চর্চাটি অব্যাহত থাকার পেছনে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমদিকে আগের সরকারের আমলাতন্ত্র পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় পরিপূর্ণভাবে যোগ্যতানির্ভর পদায়ন, পদোন্নতি বদলি হয়েছে সেটা বলা যাবে না। এখানে সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড কতটুকু অনুসরণ করা হয়েছে, সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ।

সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে দেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, সে লক্ষ্য পূরণ করতে হলে সব ধরনের চাপ ও তদবির উপেক্ষা করে সৎভাবে কাজ করতে হবে। তদবিরের দোহাই দিয়ে অযোগ্য-অদক্ষদের পুনর্বাসন করা হলে তা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া কালবেলাকে বলেন, তদবির নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সমগ্র প্রশাসনের মধ্য থেকে যোগ্য ও সাহসী কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করতে হবে। অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ কর্মকর্তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তবে সরকারের দায়িত্বশীলদের মধ্যে যদি ব্যক্তিগত পছন্দ, ব্যক্তিগত বিদ্বেষ কাজ করে, তাহলে ভালো প্রশাসন পাওয়া যাবে না। এমন অবস্থা চলতেই থাকবে।

এ প্রসঙ্গে চেষ্টা করেও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের বক্তব্য জানতে পারেনি কালবেলা।

সূত্র: দৈনিক কালবেলা

ইউক্রেনকে ‘ধ্বংস’ করার হুমকি পুতিনের

সুন্দরবন নিউজ২৪/ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১:৫১ অপরাহ্ণ
ইউক্রেনকে ‘ধ্বংস’ করার হুমকি পুতিনের

রাশিয়ার কাজান শহরে ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনকে ধ্বংস করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) তাতারস্তান অঞ্চলের এই শহরে ছয়টি ড্রোন আবাসিক ভবনে এবং একটি ড্রোন একটি শিল্প কারখানায় আঘাত হানে। এই ঘটনার পর রোববার এক ভিডিও বক্তৃতায় পুতিন বলেন, যারা আমাদের দেশকে ধ্বংস করতে চায়, তারা এর বহু গুণ বেশি ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হবে এবং তাদের এই কাজের জন্য অনুশোচনা করতে হবে।

শনিবার সকালের ওই হামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো হতাহতের খবর জানানো হয়নি। তবে রুশ গণমাধ্যম জানিয়েছে, জানালার কাচ ভেঙে তিনজন সামান্য আঘাত পেয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা যায়, ড্রোনের আঘাতে একটি উঁচু ভবনে আগুন ধরে যায় এবং বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

কাজান শহরটি ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত। যদিও ইউক্রেন এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে এটি কিয়েভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়া বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুতিন অতীতে কিয়েভের কেন্দ্রে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনে নতুন অগ্রগতির দাবি করেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা খারকিভ অঞ্চলের লোজোভা গ্রাম এবং দোনেৎস্ক অঞ্চলের সোনৎসিভকা গ্রাম দখল করেছে।

সোনৎসিভকা রাশিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি কুরাখোভের নিকটে অবস্থিত। কুরাখোভে সম্পদসমৃদ্ধ এলাকা রাশিয়ার প্রায় ঘিরে ফেলা হয়ে গেছে এবং এটি মস্কোর জন্য দোনেৎস্ক দখলের চাবিকাঠি হতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মস্কো ২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগেই যতটা সম্ভব এলাকা দখল করতে চাইছে। ট্রাম্প ইউক্রেন সংকট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো নির্দিষ্ট সমাধানের পরিকল্পনা জানাননি।

রাশিয়ার সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা এ বছর ১৯০টিরও বেশি ইউক্রেনীয় বসতি দখল করেছে। ইউক্রেন বর্তমানে জনবল এবং গোলাবারুদের সংকটের কারণে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

সূত্র: আল-জাজিরা

১৫ বছরে পুলিশ নজিরবিহীন অন্যায় করেছে: আইজিপি

সুন্দরবন নিউজ২৪/ন্যাশনাল ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯:৩৪ অপরাহ্ণ
১৫ বছরে পুলিশ নজিরবিহীন অন্যায় করেছে: আইজিপি

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক কু-প্রভাবে পুলিশ যেসব ঘটনা ঘটিয়েছে, তা পৃথিবীর কোনো পুলিশ করেনি। এসব কর্মকাণ্ড পুলিশকে মারাত্মকভাবে হেয় করেছে। পুলিশ এতটা নির্মম হতে পারে তা চিন্তা করতেই লজ্জা হয়।

শনিবার দুপুরে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আইজিপি এ সময় জানান, তিনি সারা দেশের বিভিন্ন ইউনিট ঘুরে পুলিশ সদস্যদের মনের কথা জানার চেষ্টা করছেন। তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য কি করা যায়, সেই চেষ্টাই করছেন।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কু-প্রভাব আর আসবে না। তবে সু-প্রভাবের প্রয়োজন আছে।

সারা দেশে মিথ্যা মামলার বিষয়ে আইজিপি বলেন, কোনো নিরপরাধ লোককে গ্রেফতার করা যাবে না। বরং প্রাথমিক তদন্তে নিরপরাধ মনে হলে তাকে গ্রেফতার না করতে তদন্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।

পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনতে, পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে শনিবার সকালে সিলেটে পৌঁছান আইজিপি বাহারুল আলম। সিলেটে পৌঁছেই এসএমপি সদর দপ্তরে সিলেট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন।

প্রায় ২ ঘণ্টা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইজিপি। শুরুতেই পুলিশ রিফর্ম বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে বিষয়টি পুলিশ রিফর্ম কমিশন চিন্তা করছেন, আমরাও তা চাই। সেটা হলো রাজনৈতিক কুপ্রভাব যেন আর পুলিশের ওপর না পড়ে। সু-প্রভাব আসতে পারে। কারণ রাজনীতিবিদরাই আমাদের কান্ডারি। তারাই দেশ চালাবেন। তবে তাদের কু-প্রভাব থেকে যেন আমরা মুক্ত হতে পারি।

আইজিপি বলেন, গত ১৫ বছরে দলীয়ভাবে এতো কু-প্রভাব আমাদের ওপর আসছে, হেন অন্যায় নেই যা আমরা করিনি। এটা আপনারাও জানেন আমরাও জানি। এটার জন্য আমরা অত্যন্ত দু:খিত এবং লজ্জিত।

বাহারুল আলম বলেন, ‘আমরা তো সেই বাহিনীর সদস্য, আমাদের মধ্যে সেই উপলব্ধিটা আসে, যখন এসব চিত্র দেখি। যেসব ঘটনা আমরা ঘটিয়েছি, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা পুলিশ ঘটায়নি। সেনাবাহিনী হয়তো যুদ্ধক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে, কিন্তু পুলিশ এতো নির্মম তা আমি ব্যক্তিগতভাবেও ভাবতে পারিনা। এটা রাজনীতিবিদরা কেন করতে গেলেন? দলীয় কিংবা গোষ্ঠির স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এমন আদেশ দেওয়া হলো যে, মানুষের প্রাণ সংহার করে ফেলবেন? আগে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠাতো কিন্তু এভাবে প্রাণে মেরে ফেলবে- এর জবাব আমার কাছে নেই। যে পর্যায়ে পুলিশ চলে গেছে সেখান থেকে উত্তরণ ঘটানোই আমার বড় চ্যালেঞ্জ’।

পুলিশ যে কর্মস্পৃহা হারিয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, পুলিশ সদস্যদের সহকর্মীরা মারা গেছে, মব জাস্টিস পুলিশের বিরুদ্ধেও হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে অত্যন্ত কষ্টের মধ্য দিয়ে, মানসিকভাবে তাদের মধ্যে ঝড় বয়ে গেছে। শুধু পুলিশ নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ঝড় বয়ে গেছে। কারণ আমরা এসব দেখে অভ্যস্ত নই।

তিনি বলেন, পুলিশ যেহেতু একেবারে সামনের সারিতে ছিলো, তার তাদের ওপরেই প্রভাব বেশি পড়েছে। পুলিশ যখন দেখেছে, তার সহকর্মীকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে, আবার কেউ দৌড়ে এসে লাথি মারছে পুলিশকে। কারণ মানুষের ভেতরে এতো ঘৃণা জন্মেছে যে, তা আর মানুষ নিতে পারছে না। আর পুলিশ এইসব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে তাদের কর্মস্পৃহা হারিয়েছে। পুলিশের কর্মস্পৃহা ফিরিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সে কারণেই ঢাকায় বসে না থেকে সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের কাছে যাচ্ছি, পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছি। তারা কি ভাবছে, তারা কি চায়- সেগুলো শুনে ব্যবস্থা নেওয়াই আমার কাজ। আমি হয়তো সব পারবো না, তবে তাদের মনের কষ্টের কথা শুনতে চাই, তাতে তাদের মন হয়তো হালকা হবে।

পুলিশ হত্যা নিয়ে সদস্যদের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা প্রশমনে কি উদ্যোগ নেবেন- এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, পুলিশ এখন একটা মনভাঙা অবস্থায় রয়েছে। যার যা সক্ষমতা ছিলো তাও এখন কাজ করছে না। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বিশ্বাসটা ভেঙে গেছে, যে আমি আবার মানুষের কাছে যাব, কাজ করবে। ভয়ে, আতংকে, সহকর্মীদের মৃত্যুতে, তারপর আবার দেখেছে যে সিনিয়র অফিসাররা হুকুম দিয়ে পালিয়ে গেছে। কোথাও তো একজন এসপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেউ তো মারা যাননি! যারা মারা গেছে, তারা ইন্সপেক্টর টু কনস্টেবল। তার মানে আমরা অফিসাররা পালিয়ে গেছি পুরো ফোর্সকে অনিরাপদ করে। এখন এই ফোর্সকে আবারও উজ্জীবিত করা বড় চ্যালেঞ্জ।

৫ আগষ্ট ও পরবর্তী সময়ে পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার বিষয়ে এক প্রশ্নে আইজিপি বলেন, প্রায় ৬ হাজার অস্ত্র লুট হয়েছে। এর মধ্যে দেড় হাজার অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা যায়নি।

তিনি বলেন, এসব অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। তবে এসব উদ্ধার করা তখনই সম্ভব হবে, যখন সব মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে। তখন সমাজের মানুষজনই এসব অস্ত্রের খোঁজ দেবে।

এর আগে সারা দেশে নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আইজিপি বলেন, ইতোমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রাথমিক তদন্তে যাদের নিরপরাধ মনে হবে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আশ্বস্ত করতে হবে যে, তাকে গ্রেফতার করা হবে না। এছাড়া একটি কমিটি করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। যে কমিটি তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই নিরপরাধ মানুষকে মামলা থেকে বাদ দিতে পারবেন।

এদিন দুপুরের পর সিলেট পুলিশ লাইনে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন আইজিপি। তাদের কষ্টের কথা শোনেন। তাদের কষ্ট লাঘবের আশ্বাস দেন।

পাকাপাকি ভাবে ভারত ছাড়ছেন কোহলি!

সুন্দরবন নিউজ২৪/স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ
পাকাপাকি ভাবে ভারত ছাড়ছেন কোহলি!

ভারতীয় ক্রিকেট তারকা বিরাট কোহলি শিগগিরই পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। কোহলির শৈশবের কোচ রাজকুমার শর্মা সম্প্রতি দৈনিক জাগরণ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কোহলি তার স্ত্রী আনুশকা শর্মা ও সন্তানদের নিয়ে লন্ডনে বসবাস শুরু করার চিন্তা করছেন। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি, তবে দ্বিতীয় সন্তান আকায় জন্মের পর থেকেই কোহলি ও আনুশকা পরিবার নিয়ে লন্ডনে অনেকটা সময় কাটাচ্ছেন।

রাজকুমার শর্মা বলেন, ‘হ্যাঁ, বিরাট তার স্ত্রী আনুশকা ও সন্তানদের নিয়ে লন্ডনে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। খুব শিগগিরই তিনি ভারত ছেড়ে লন্ডনে স্থায়ী হবেন। তবে আপাতত কোহলি ক্রিকেটের পাশাপাশি বেশিরভাগ সময় পরিবারকে দিচ্ছেন।’

কোহলি ও আনুশকার লন্ডনে নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর থেকেই তাদের লন্ডনে কাটানো সময় আরও বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই দম্পতি খুব শিগগিরই স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাস শুরু করবেন।

৩৬ বছর বয়সী কোহলি ইতোমধ্যে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে তিনি টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে কতদিন খেলবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। সাম্প্রতিক সময়ে তার পারফরম্যান্স কিছুটা ম্লান থাকায় তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভক্ত ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে।

১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে র‌্যাঙ্কিংয়ে কোহলি

এ বছরের শুরুতে অবসর প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোহলি জানিয়েছিলেন, অবসরের পর দীর্ঘ সময় তাকে আর দেখা যাবে না। আরসিবি-এর সঙ্গে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমাদের ক্যারিয়ারের একটা শেষ সময় থাকে। তাই আমি আগেভাগেই সব পরিকল্পনা করছি। আমি চাই না আমার ক্যারিয়ার শেষে কোনো অতৃপ্তি থাকুক।’

কোহলি আরও বলেন, ‘আমি যখন অবসর নেব, তখন দীর্ঘ সময়ের জন্য হারিয়ে যাব (হাসি)। তাই যতদিন খেলব, ততদিন নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। এটাই আমাকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে।’

কোহলির এই পরিকল্পনা তার ভক্তদের মধ্যে নতুন কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, কবে তিনি পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে স্থায়ীভাবে পাড়ি জমান।