হার্টের রিং সিন্ডিকেটে খোদ চিকিৎসকরা


ইয়াছিন মোড়ল প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ন /
হার্টের রিং সিন্ডিকেটে খোদ চিকিৎসকরা

সুন্দরবন নিউজ অনলাইন ডেস্ক 

হৃদরোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই ‘রিং’ স্থাপন করতে হয়। চিকিৎসকরা যত দ্রুত সম্ভব প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে চান। ফলে রোগীর স্বজনদের স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে হয়। হার্ট বা হৃদযন্ত্রে যে স্টেন্ট বা রিং স্থাপন করা হয়, সেটির গুণ-মান সম্পর্কে রোগী বা তার স্বজনের জানার কোনো সুযোগ থাকে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর মূল্য নিয়েও মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকে না তাদের। এ অসহায়ত্বের সুযোগে দেশে হার্টের রিং নিয়ে অনৈতিক বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন একশ্রেণির সরবরাহকারী ও চিকিৎসক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশে মূলত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা চিকিৎসকদের মাধ্যমেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করোনারি স্টেন্ট বা হার্টের রিং সরবরাহ করে। রোগীর হার্টে একেকটি রিং স্থাপনের জন্য চিকিৎসকরা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন নেন। কখনো কখনো কমিশনের একাংশ চলে যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। এতে রিংয়ের মূল্য বেড়ে যায়। অনৈতিক এ কমিশন বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ক্যাথল্যাবে প্রায় এক সপ্তাহ সরেজমিন দেখা গেছে, রোগীকে ক্যাথল্যাবে নিয়ে যাওয়ার পর বাইরে স্বজনরা অপেক্ষা করেন। চুক্তি অনুযায়ী চিকিৎসকই পছন্দের কোম্পানির স্টেন্ট বা রিং সরবরাহ ও খরচের কথা জানাচ্ছেন। ক্যাথল্যাবের পাশেই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা অপেক্ষা করেন। পছন্দের চিকিৎসক চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানির প্রতিনিধিকে ডেকে স্টেন্ট সংগ্রহ করছেন। এ প্রক্রিয়ায় রোগীর স্বজনদের পছন্দের সুযোগ নেই।

ইনস্টিটিউটের পরিচালকের স্ত্রী ও ওয়ার্ডবয় টিপুর স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তারের শেয়ার কিনে নিয়েছি। তারা এখন আর এই প্রতিষ্ঠানে নেই।’

সংশ্লিষ্ট নথিপত্র বলছে, এইচআরএস কার্ডিয়াকে চারজনের ব্যবসা রয়েছে। মীর জামাল উদ্দিন তাদের অন্যতম।

দেশে দেশে হার্টের রিংয়ের দাম: চলতি বছরের জুনে ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটি অব পাকিস্তান (ডিআরএপি) চারটি কার্ডিয়াক স্টেন্টের জন্য নতুন দাম প্রকাশ করেছে। সূত্র অনুযায়ী, ইউএস প্রোমোস প্রিমিয়ারের দাম ৫৮ হাজার ৭৬৫ পাকিস্তানি রুপি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিইসিন এক্স টু এনইসিএসএস নোভোলিমাস ড্রাগ-ইলুটিং স্টেন্ট সিস্টেমের দাম সর্বোচ্চ ৭২ হাজার ৪৫০ রুপি। জাপানের আল্টিমাস্টার সিরোলিমাস এলুটিং করোনারি স্টেন্ট সিস্টেমের মূল্য নির্ধারণ করেছে ৬৫ হাজার ৫০৭ রুপি। তুর্কি ও ইতালির সিআরই ৮ এমফিলিমাস ইলুটিং করোনারি স্ট্যান্টের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ১৩০ রুপি। ভারতীয় ওয়েবসাইট কার্ডিওমেটের তথ্যমতে, ভারতে হৃদরোগের একটি স্টেন্টের জন্য ৭ হাজার থেকে ৩৫ হাজার রুপি খরচ করতে হয়।

নতুন মূল্য নির্ধারণ ওষুধ প্রশাসনের: এদিকে গত ১২ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২৭টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ৪৪ ধরনের কার্ডিয়াক স্টেন্টের (হার্টের রিং) দাম ২ হাজার থেকে ৫৬ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)। সে হিসাবে স্টেন্ট প্রতি ৩ শতাংশ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত দাম কমছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এ নতুন দাম কার্যকর হবে। একই সঙ্গে হৃদরোগের চিকিৎসা প্রদানকারী সব হাসপাতালের নোটিশ বোর্ডে করোনারি স্টেন্টের মূল্যতালিকা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে ডিজিডিএ।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র উপপরিচালক ও আইন কর্মকর্তা মো. নূরুল আলম কালবেলাকে বলেন, ‘হার্টের রিংয়ের (স্টেন্ট) দাম কমিয়েছে সরকার। নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত কেউ বিক্রি করতে পারবে না। অধিক মূল্যে কেউ বিক্রি করলে ওষুধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩ অনুযায়ী দুই বছরের কারাদণ্ড কিংবা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার ইক্যুইপমেন্ট অ্যান্ড ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর স্টেন্টের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ট্যাক্স সংযুক্ত করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। স্টেন্টের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে এসব ইনক্লুড করা হলে আমদানিকারকদের জন্য ভালো হতো।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে আমরা সরাসরি রিটেইল করি। বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে অনেক কোম্পানি কমিশনের ভিত্তিতে রিটেইল করে থাকে। চিকিৎসকদের কোনো কমিশন দিয়ে স্টেন্ট বিক্রি করি না।’

কার্ডিয়াক কেয়ারের বিক্রয় প্রতিনিধি তারেক কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকদের কমিশন দিয়ে স্টেন্ট বিক্রি করি না। মাদার কোম্পানি (অ্যাব্রড) বিভিন্ন সময়ে হৃদরোগের চিকিৎসা বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এর বাইরে স্টেন্ট বিক্রির জন্য চিকিৎসকদের কোনো কমিশন বা সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই।’